বৃহস্পতিবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৯:১৪ অপরাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম :
ক্লাসে ফেরার শর্ত দিলো বুয়েট শিক্ষার্থীরা

ক্লাসে ফেরার শর্ত দিলো বুয়েট শিক্ষার্থীরা

স্বদেশ ডেস্ক:

মেধাবী শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ হত্যাকাণ্ডের পর থেকেই আন্দোলনে রয়েছে বুয়েটের শিক্ষার্থীরা। তারই অংশ হিসেবে ক্লাস-পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছেনা শিক্ষার্থীরা। তবে বুয়েট প্রশাসন তিনটি শর্ত মানলেই ক্লাস-পরীক্ষায় ফিরে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে তারা। বৃহস্পতিবার বিকেলে বুয়েট শহীদ মিনারের পাদদেশে সংবাদ সম্মেলন করে এই ঘোষণা দিয়েছেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। গতকাল বুধবার পুলিশ আদালতে আবরার হত্যা মামলার অভিযোগপত্র দাখিল করেছে।

শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে গণমাধ্যমের সাথে কথা বলেন বুয়েটের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ১৫তম ব্যাচের ছাত্র অনিরুদ্ধ গাঙ্গুলী। তিনি অভিযোগ করেন, বুয়েট প্রশাসনের সাথে বারবার আলোচনার মাধ্যমে ও পর্যাপ্ত সময় দিয়ে বুয়েটে একটি সুস্থ ও সুন্দর পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে তাদের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ সহযোগিতা অব্যাহত থাকলেও প্রশাসনের পক্ষ থেকে সদিচ্ছা এবং পর্যাপ্ত পদক্ষেপের অভাব দেখছেন তারা।

যে তিনটি দাবি মানা হলে বুয়েট শিক্ষার্থীরা ক্লাস-পরীক্ষায় ফিরবেন, সেগুলো হলো মামলার অভিযোগপত্রের ভিত্তিতে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বুয়েট থেকে স্থায়ী বহিষ্কার, বুয়েটের আহসানউল্লাহ, তিতুমীর ও সোহরাওয়ার্দী হলে আগে ঘটে যাওয়া র‌্যাগিংয়ে ঘটনাগুলোয় অভিযুক্ত ব্যক্তিদের অপরাধের মাত্রা অনুযায়ী শাস্তি, সাংগঠনিক ছাত্ররাজনীতি এবং র‌্যাগিংয়ের জন্য সুস্পষ্টভাবে বিভিন্ন ক্যাটাগরি ভাগ করে শাস্তির নীতিমালা প্রণয়ন করার পর একাডেমিক কাউন্সিল ও সিন্ডিকেটে অনুমোদন করে বুয়েটের অধ্যাদেশে সংযোজনের জন্য পরবর্তী ধাপগুলোয় পাঠানো।

সংবাদ সম্মেলনে অনিরুদ্ধ বলেন, মাঠপর্যায়ের আন্দোলন শেষে সাধারণ শিক্ষার্থীদের সাথে বুয়েট প্রশাসনের কয়েক দফা আলোচনা হয়। সর্বশেষ ২ নভেম্বর বুয়েটের ভিসি সাইফুল ইসলাম, ছাত্রকল্যাণ দপ্তরের পরিচালক মিজানুর রহমান ও অনুষদগুলোর ডিনদের উপস্থিতিতে একটি সভা হয়। ওই সভার প্রধান আলোচ্য বিষয় ছিল শিক্ষার্থীরা কখন একাডেমিক কার্যক্রমে ফিরবেন। সভা শেষে শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে প্রশাসনকে লিখিতভাবে ওই তিন দাবির কথা বলা হয়েছে। প্রথম দুটি দাবি পূরণ হলে তারা আসন্ন টার্ম ফাইনাল পরীক্ষার তারিখ গ্রহণ করতে সম্মত হবেন, আর পরীক্ষা শুরু হওয়ার অন্তত সাত দিন আগে তৃতীয় দাবিটি পূরণ করা হলে তাঁরা পরীক্ষায় বসবেন। অন্যথায় বুয়েট প্রশাসন আন্তরিক নয় ও প্রতিশ্রুতি পূরণে ব্যর্থ ধরে নিয়ে পরীক্ষায় অংশগ্রহণে অসম্মতি জানাবেন।

সংবাদ সম্মেলনে বুয়েট শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে আরও বলা হয়, ২ নভেম্বরের সেই সভায় প্রশাসন শিক্ষার্থীদের অভিযোগপত্র পেলে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের স্থায়ী বহিষ্কারের কথা জানিয়েছিল। বলা হয়েছিল, আহসানউল্লাহ, তিতুমীর ও সোহরাওয়ার্দী হলে আগে ঘটে যাওয়া র‌্যাগিংয়ের ঘটনাগুলোর ক্ষেত্রে পরবর্তী সপ্তাহের মধ্যেই তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়া হবে এবং শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে। প্রশাসনের ওপর বিশ্বাস রেখে আমরা অপেক্ষা করলেও দুই সপ্তাহেও দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি দেখা যায়নি।

জানতে চাইলে ছাত্রকল্যাণ পরিচালক বলেছেন, ‘এ ব্যাপারে তিনি অবগত নন। সাংগঠনিক ছাত্ররাজনীতি ও র‌্যাগিংয়ের বিষয়ে নীতিমালা প্রণয়নে কমিটি করার কথা বলা হলেও এখন পর্যন্ত তার অগ্রগতিসংক্রান্ত তথ্য আমাদের জানানো হয়নি।’

আবরার ফাহাদ হত্যার ঘটনায় ২৫ জনকে আসামি করে গতকাল আদালতে অভিযোগপত্র (চার্জশিট) দিয়েছে পুলিশ। আসামি ২৫ জনের মধ্যে ২১ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি)।

তদন্ত শেষে পুলিশ বলেছে, আবরারকে হত্যায় সরাসরি যুক্ত ছিলেন ১১ জন। তাঁরাই আবরারকে কয়েক দফায় মারপিট করেন। বাকি ১৪ জন বিভিন্ন পর্যায়ে বিভিন্নভাবে এ হত্যাকাণ্ডে জড়িত ছিলেন।

অভিযোগপত্রভুক্ত ২৫ আসামির মধ্যে ২১ জনকে ইতিমধ্যে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ২১ জনের মধ্যে ১৬ জনের নাম আবরারের বাবার করা হত্যা মামলার এজাহারে আছে। তারা হলেন মেহেদী হাসান রাসেল, মো. অনীক সরকার, ইফতি মোশাররফ সকাল, মো. মেহেদী হাসান রবিন, মো. মেফতাহুল ইসলাম জিওন, মুনতাসির আলম জেমি, খন্দকার তাবাখখারুল ইসলাম তানভির, মো. মুজাহিদুর রহমান, মুহতাসিম ফুয়াদ, মো. মনিরুজ্জামান মনির, মো. আকাশ হোসেন, হোসেন মোহাম্মদ তোহা, মো. মাজেদুল ইসলাম, শামীম বিল্লাহ, মোয়াজ আবু হুরায়রা ও এ এস এম নাজমুস সাদাত।

বাকি পাঁচজনের নাম তদন্তে বেরিয়ে এসেছে। তারা হলেন ইসতিয়াক আহম্মেদ মুন্না, অমিত সাহা, মো. মিজানুর রহমান ওরফে মিজান, শামসুল আরেফিন রাফাত ও এস এম মাহমুদ সেতু। পলাতক আছেন চারজন। পলাতক জিসান, তানিন ও মোর্শেদের নাম মামলার এজাহারে রয়েছে। এজাহারের বাইরে আরেক আসামি হলেন রাফি।

গত ৬ অক্টোবর দিবাগত রাতে বুয়েটের শেরেবাংলা হল থেকে তড়িৎ ও ইলেকট্রনিকস প্রকৌশল বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদের লাশ উদ্ধার করা হয়। পরে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা তাকে পিটিয়ে হত্যা করেছেন।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877